ছৈয়দ আলম, মহেশখালী থেকে ফিরে:

ছবির মানুষটি একজন পেশায় শিক্ষক। বাড়ি মহেশখালী। প্রতিষ্ঠানের কাজে গিয়েছিলেন পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরে। যাওয়ার সময় ছিল সম্পূর্ন জোয়ার আর মহেশখালী ফেরার পথে একদম ভাটা। বেচারা কক্সবাজার থেকে স্পীড নিয়ে মহেশখালী জেটিঘাটের অন্তত ২’শ গজ দুরে ভাটার কারণে স্পীড চলাচল করতে না পারায় হঠাৎ হাটু পরিমান পানি ও কাঁদা মাটিতে নেমে পড়ে। তিনি প্রতিবেদক ও অন্যান্য যাত্রীদের সামনে মুচকি হেসে হেসে উচ্ছস্বরে বলেন, অ-বাজি আঁরার হষ্ট হনে বুঝের! হত মন্ত্রী-এমপি হত নেতা মহেশখালী আইয়ের কিন্তু তারা সরকারী প্রটোকল নিয়ে আরাম-আয়েশে ঘাট পার হয়ে চলে যায়। আমাদের মত গরিব মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা মরে কাঁদা মাটিতে ও পানিতে। এ-বিচার আল্লাহ করবে একদিন। এভাবেই বলে বলে অন্তত ২শ গজ পানিতে হেটে হেটে মাথায় একটি ব্যাগ ও প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নিয়ে মহেশখালী জেটিঘাটে পৌছেন।

সুত্র জানায়, কক্সবাজার থেকে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌ-পথ। কিন্তু এই পথে মহেশখালীতে জরাজীর্ণ একটি জেটিঘাট থাকলেও কক্সবাজার প্রান্তে নেই কোন স্থায়ী ঘাট। ফলে ভাটার সময় হাঁটু পানি ও কাঁদাপথ পাড়ি দিয়ে উঠতে হয় ট্রলার ও স্পীড বোটে। এতে দুর্ভোগে পড়েন প্রতিদিন যাতায়াত করা অন্তত ৭ হাজার মানুষ। তার সাথে বাড়তি সমস্যা যোগ হয়েছে অবৈধ টোল আদায়। কক্সবাজার থেকে সাগর পথে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। এ পথে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা কাঠের ট্রলার ও স্পীড বোট। যা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে অন্তত ৭ হাজার মানুষ।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘ভাটার সময় বিশেষ করে মহিলা এবং বয়োবৃদ্ধদের পারাপার করতে অনেক কষ্ট হয়। এছাড়া ওই সময় নৌকা পাওয়া যায় না। মাঝ-পথে নৌকা আটকে গেলে যাত্রীদের অনেক সমস্যা হয়। আর সাধারণ মানুষের দাবি, যাত্রী ও সাধারণ মানুষ থেকে সরকারি লোক টাকা নিলেও কোনও উন্নয়ন করছে না। ‘

এদিকে মহেশখালী বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যাপক মো: মাহবুবুর রহমান দৈনিক হিমছড়িকে বলেন, নিয়মিত ড্রেজিং ও জেটি সংস্কারের মাধ্যমে এ দুর্ভোগের সমাধান। আর না হয় বছর-মাস ধরে কোন সমাধানের পথ নাই। বর্তমানে মহেশখালীতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু আসল যাতায়াতের পথ জেটিঘাটের উন্নয়ন হচ্ছেনা। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তাই মহেশখালী জেটির সম্প্রসারণ করা এখন সময়ের দাবি।

মহেশখালী জেটি ঘাটটি ১৯৮৯ সালে নির্মিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোন সংস্কার করা হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, শুধু আশ্বাস নয়, দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত জেটিঘাটের সমস্যার সমাধান চান তারা। অপরদিকে দীর্ঘ সময় ধরে অসংখ্য দুর্ঘটনা ও যাত্রীদের নানা অভিযোগের পরও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রতি বছর এ জেটি থেকে ৩০/৪০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও জেটি সম্প্রসারণে কর্তৃপক্ষের মাথাব্যাথা নেই বলে অভিযোগ করেন ব্যবহারকারীরা।

স্পীডবোটের যাত্রী আরমান জানান, ভাটা শুরু হলেই নেমে আসে দুর্ভোগ। ভাটা শুরুর পর অল্প সময়ের জন্য ডিঙি নৌকা দিয়ে জেটিতে যাত্রী পারাপার করা যায়। ভাটা পূর্ণ জেটি থেকে অন্তত ২০০ গজ দূরে আটকে পড়ে সব ধরনের নৌযান। এসময় কোনও নৌযানই ঘাটে ভিড়তে পারে না। এমনকি বিকল্প বাহন ডিঙি নৌকাও চলাচল করতে পারছে না। প্রতিদিন প্রায় ৫ ঘণ্টা এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

তিনি আরো জানায়, ভাটার সময় নিরুপায় হয়ে কোমর সমান কাঁদা আর হাঁটু সমান পানি ভেঙে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে পুরুষ যাত্রীরা কোনওভাবে চলাচল করতে পারলেও নারী, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের চরম কষ্ট হচ্ছে। রোগীদের কষ্ট আরও বেশি।